আদিবাসীদের গণবিবাহের নামে ভিএইচপি-র ধর্মান্তরণের পর্দাফাঁস করল ফর্ম

একটা আপাত নিরীহ ফর্ম। জ্বলজ্বল করছে,”আমরা উভয়ে স্ব-ইচ্ছায় হিন্দু পদ্ধতি মতে এই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হই এবং আজীবন হিন্দু সংস্কৃতির প্রসার ও প্রচারের শপথগ্রহণ করি।” মালদহে গণবিবাহে ধর্মান্তরণের ঘটনার তথ্য-তালাশ করতে গিয়ে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ। মালদহের গাজোল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ আট মাইল। সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল।

গ্রামের মোড়াম রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখি একটা জটলা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বললাম। একটু এগোতেই দেখা হল পিঙ্কি মান্ডি ও রেজিনা কোলের সঙ্গে। সাংবাদিক ও ক্যামেরা দেখে খানিকটা সঙ্কোচে পড়েছিলেন দুজনে। তবে ভরসা দিতে মুখ খুললেন। আদিবাসী সমাজে বিয়ে না করেও একসঙ্গে থাকার রেওয়াজ রয়েছে। আধুনিক সমাজে যাকে বলে ‘লিভ ইন’। পিঙ্কি ও তার পুরুষসঙ্গীর সন্তানও রয়েছে। কিন্তু সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে লাগে সামাজিক স্বীকৃতি। গ্রামের দাদারা সেটাই বুঝিয়েছিল ওদের। সেই কথা শুনে VHP-র গণবিবাহ গিয়েছিলেন পিঙ্কি ও তাঁর সঙ্গী। হিন্দুত্বের প্রসার-প্রচার কী বস্তু! ওরা বোঝে না। পিঙ্কি বুঝেছিলেন, নিখরচায় বিয়ে। তারপর সামাজিক স্বীকৃতি। রেজিনা জেনেছিলেন, সরকার থেকে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু বিয়ের দিন ঠাওর হল, ব্যাপারটা সুবিধের নয়।

এই তো ২ ফেব্রুয়ারি পুরাতন মালদহে গণবিবাহ ঘিরে বাঁধে তুলকালাম। আটমাইলে আদিবাসী যুবক-যুবতীদের গণবিবাহের ব্যবস্থা করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ঝাড়খন্ড দিশম পার্টি। গণবিবাহের নামে ধর্মান্তরণের অভিযোগ উঠেছিল সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন VHP-র  বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল তারা। কিন্তু ফর্ম প্রকাশ্যে আসতেই পুরো বিষয়টি খোলসা হয়ে গিয়েছে। ধর্মান্তরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ভিএইচপির বিরুদ্ধে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিস।

গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ”বদমাইশি করে মালদহে আদিবাসী মেয়েগুলিকে ধর্মান্তরণ করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল বিজেপির লোকগুলো।” বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের গণবিবাহের ব্যবস্থা করা হয় তাঁর উদ্যোগেই।