নারী শ্রমিকের পদোন্নতিমেলে না এক যুগেও

This story first appeared in Kalbela

তৈরি পোশাকশিল্প শুধু দেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখছে না, নারীর ক্ষমতায়নেও বিপ্লবের সূচনা করেছে। নারীও তার শ্রম-ঘামে দেশের পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের সবচেয়ে বড় এই রপ্তানি খাতে নারীর ভূমিকাই অগ্রগণ্য। অথচ এখানেও বৈষ্যমের শিকার নারী শ্রমিকরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক যুগ কাজ করেও একটা পদোন্নতি মেলে না তাদের। অথচ এ সময়ে একজন পুরুষ শ্রমিক দুই থেকে তিনটি পদোন্নতি পেয়ে জিএম পদেও পৌঁছে যান। এ ছাড়া কারখানায় প্রতিনিয়ত গালাগাল ও মারধরের শিকার নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকসানা আক্তার কালবেলাকে বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারী-পুরুষ শ্রমিকের সম-মজুরি, সম-পদোন্নতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি; কিন্তু পদোন্নতির ক্ষেত্রে নারী শ্রমিককে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। একজন নারী শ্রমিক তার ক্যারিয়ারে হেলপার থেকে লাইন অপারেটর হতে পারে মাত্র। লাইন অপারেটরে কমপক্ষে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাজ করেও পদোন্নতি পান না তারা। কদাচিৎ দু-একজন নারী শ্রমিককে পদোন্নতি দেওয়া হয় সুপারভাইজার পদে। অন্যদিকে একই সময়ে পুরুষ শ্রমিক অপারেটর, সুপারভাইজার, পিএম, জিএম পদে পদোন্নতি পায়। নারীকে কখনো পিএম-জিএম করা হয় না।

তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নারী শ্রমিকদেরও এগিয়ে নিতে হবে। নারী শ্রমিকের অধীনে নারী শ্রমিকরা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতে নারী-পুরুষ শ্রমিকের বেতনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে।

বেতন-পদোন্নতিতে বৈষ্যম তো আছেই, সেইসঙ্গে পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত গালাগালের মুখে চাকরি করতে হয়। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা ও সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে রহিমা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সেখানে কর্মরত লাইন শিফট সোহেল মুন্সী দিনের পর দিন তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। রহিমা বলেন, এমন নোংরা ভাষায় কথা বলে, লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করত; কিন্তু সংসারের কথা ভেবে চাকরি ছাড়তে পারছিলাম না। একদিন সব বাঁধ ভেঙে গেল। চাকরি ছেড়ে দিলাম; কিন্তু আমার পাওনাদিও ঠিকমতো পাইনি।

এ বিষয়ে রোকসানা আক্তার বলেন, কারখানার লাইন অপারেটর ও সুপারভাইজাররা নারী কর্মীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। অনেক ক্ষেত্রে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাও ঘটে। যদিও নারী মুখ বুজে নিজের চাকরিটা করে যায়।

রাজধানীর মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় সুইং অপারেটরের কাজ করেন মনিরা। ১৪ বছর ধরে তিনি এ পেশায় যুক্ত। মনিরা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ যখন মনে করে ছাঁটাই করতে হবে, তখন নারী-পুরুষ সবাইকেই গালাগাল করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শ্রমিকরা যেন চাকরি ছেড়ে চলে যান। সে ক্ষেত্রে তাদের টাকা-পয়সা, পাওনা দিতে হবে না। তাই অনেকে মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করে কাজ করেন। তিনি বলেন, গর্ভবতী শ্রমিকরা কত কষ্ট করে কাজ করেন। অথচ তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটির ভাতা দেয় না। চাকরি ছাড়লে প্রাপ্য টাকা দেয় না।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান কালবেলাকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি পোশাক কারখানায় নারীবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা। তারা যাতে কোনোরকম নির্যাতন, বৈষম্যের শিকার না হয় এজন্য সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে না, তাও নয়। এসব প্রমাণিত হলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। যে পোশাককর্মীরা লেখাপড়ায় ভালো ফল করেছে, তারা স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হলে ৫ বছর বেতনসহ স্কলারশিপে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

নারী শ্রমিকের পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, যোগ্যতাসম্পন্ন নারী শ্রমিককে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই আমরা। সেজন্য উদ্যোগ নিয়েছি, নারীকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে সুপারভাইজার, ম্যানেজার পদে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমরা নারী শ্রমিকদের পোশাক শিল্পে ধরে রাখতে চাই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি পাওয়ায় মাকে পোশাক কারখানায় কাজ করতে দিচ্ছে না। তারা চাকরি ছাড়লেও যাতে তাদের পাওনাদি বুঝে পায়, তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়; সেদিকটাও আমরা খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি।

আজ মহান মে দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক ঐক্য গড়ি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পোশাক কারখানায় শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কোন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে কর্তৃপক্ষের, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

একজন নারী হেলপার থেকে লাইন অপারেটর হতে পারেন মাত্র। এরপর লাইন অপারেটরে এক যুগের বেশি সময় কাজ করেও পদোন্নতি পান না তারা। অন্যদিকে একই সময়ে পুরুষরা অপারেটর, সুপারভাইজার, পিএম, জিএম পদে পদোন্নতি পান। নারীকে কখনো পিএম-জিএম করা হয় না

Link to original story