স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ গিয়ে লাশ হয়ে ফেরা

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়েছেন, কেউবা হয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন। এমনকি কারও কারও মৃত্যুও ঘটেছে। অনেকেই লাশ হয়ে ফিরেছেন দেশে। পরিবহন খরচের কারণে অনেকেরই লাশ দেশে ফেরত আনা যায়নি। কেউ কেউ আবার শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে মারা গেছেন। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, এখনো ঘটেই চলেছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে দালাল নাছিমের মাধ্যমে সৌদি আরবে চাকরি করতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার হ্যাপি আক্তার (পাসপোর্ট নং-ইবি 0839345 রেজি নং NYF 20198003092G)। চাকরির টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য এক টুকরো জমি কিনবেন। সেই জমিতে ছোট্ট বাড়ি করে মাকে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাবেন। সংসারে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি তার। মাসে ২২-২৩ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিমাসে তাকে দেওয়া হতো ১৫ হাজার টাকা। এরপর তাকে মারধর করা হতো, ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। এতে হ্যাপি কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এজেন্সি অফিসে তাকে পাঠিয়ে দিতে বলেন। এতে গৃহকর্তা ক্ষুব্ধ হয়ে লাইট বন্ধ করে তিন দিন তাকে অন্ধকারের মধ্যে বাথরুমে আটকে রাখে। তিন দিন অনাহারে কাটে তার। বমসা এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর দালাল এবং এজেন্সি অফিসে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধার করার অনুরোধ জানায়। তারা বারবার ১০-১২ দিনের মধ্যে ফেরত পাঠানোর কথা বললেও তিন মাসের মধ্যেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়নি। এমনকি সৌদি এজেন্সির লোকজনও তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। হ্যাপির মা অবশেষে বমসা, বিএমইটি, বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। গৃহকর্তা এবং এজেন্সির নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হ্যাপি বমসার সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন। হ্যাপির মা বলেন, বাথরুমে বন্দি অবস্থায় না খাওয়া আর ভয়ে ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিল ও। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মেয়েকে উদ্ধার করতে পারলেও, খালি হাতে ওরা অসুস্থ মেয়েকে ফেরত দিয়েছিল। একজন বিধবা মায়ের একার পক্ষে অসুস্থ মেয়ের মনো-সামাজিক চিকিৎসা প্রদান করার সামর্থ্য ছিল না। সরকারি-বেসরকারিভাবে ওর চিকিৎসার জন্য সামান্য আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু উন্নতমানের দীর্ঘমেয়াদি যে মনো-সামাজিক চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল, তা এ সামান্য অর্থে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় ধীরে ধীরে হ্যাপির অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। মাকে নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই মাকে একা রেখেই দেশে ফেরার এক বছরের মধ্যে চলে যান না ফেরার দেশে। মেয়েকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে আজও মা চোখের পানি ফেলেন। সামাজিক-পারিবারিক অবস্থার কারণে দরিদ্র নারীরা দেশের বাইরে কাজ করতে যান। পরিবারের সচ্ছলতা, সন্তানের লেখাপড়া, ঋণ নিলে সেই ঋণ কীভাবে শোধ করবেন এসব কারণে তারা অভিবাসনে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় কতিপয় অভিবাসী নারী শ্রমিক আর্থিক, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ, পেশাগত আঘাত, স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে শূন্যহাতে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন। ফেরত আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের জন্য সমাজ ও পরিবারের নেতিবাচক ধারণার কারণেও অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তাদের জন্য যদি পুনর্বাসনের জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থা থাকত—যেখানে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা, মনো-সামাজিক চিকিৎসা, অভিবাসীর নিজের, একই সঙ্গে পরিবার ও কমিউনিটির কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, বিচার (সালিশ ও বিনামূল্যে আইনি সহায়তা), সামাজিক সুরক্ষার রক্ষাকবচ, আর্থিক সেবা, শিক্ষা, মানসম্মত পারিবারিক জীবনের জন্য সচেতনতা, সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাহলে তারা তাদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া সহিংসতার ঘটনা ভুলে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারতেন। তিনি আরও বলেন, দেশে ফেরত আসা অভিবাসী নারী শ্রমিককে কীভাবে পুনর্বাসন করা যায় সেটার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ৯(খ) ধারামতে, আলাদা প্রকল্প পরিচালনা করে দেশে ফেরত আসা নারী অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দেশে ফেরত আসা একজন অভিবাসী পুরুষ শ্রমিক ব্যবসা করতে গেলে বড় অঙ্কের ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার চিন্তা করেন। সে ক্ষেত্রে ফেরত আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকরা ২০ হাজার থেকে ১ লাখ দিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেকে ১০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কারণ নারী শ্রমিকদের চাহিদা ভিন্ন। এটিকে আলাদা ও আরও সহজভাবে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। চুক্তিপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে বিপদে নারী শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট মতে জানা যায়, আমাদের দেশে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা চুক্তিপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এর ফলে তারা বিদেশে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। ফেরত আসা শ্রমিকদের তথ্য রাখার জন্য কোনো কার্যকর ডাটাবেজ নেই। প্রতিবছর কত অভিবাসী ফেরত আসেন এবং তারা বর্তমানে কেমন আছেন এ তথ্য নেই। ২০১৬ সালে অভিবাসী যে নীতিমালা রয়েছে, নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান করা যায় না (যদিও বর্তমানে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে), বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক (MoU) রয়েছে, যার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা যায় না, বাই-লেটারাল চুক্তি খুবই কম যার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আবার ২০১৩ সালের অভিবাসী আইনেও সুনির্দিষ্টভাবে নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের বিষয়ে কিছু বলা নেই। সরকার গত বছর আগস্ট মাসে পুনর্বাসনের একটি খসড়া প্রস্তুত করে সিভিল সোসাইটির সঙ্গে শেয়ার করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। সিভিল সোসাইটি থেকে ২০১৩ সালের অভিবাসী আইনের যে সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেখানে আইনের ২২(১) এ চুক্তিপত্রের মধ্যে কর্মী ও নিয়োগকারীর ঠিকানা, ছুটি, কর্মঘণ্টা, অন্যান্য সুবিধা, যোগাযোগের অধিকার, বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি, সাব এজেন্টের নাম-ঠিকানা, চিকিৎসার সুযোগ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয় উল্লেখ থাকার সুপারিশ করা হয়েছে। যে সংশোধনীগুলো এবার এসেছে (রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সেখানে ২২-এর চুক্তিপত্রে কোনোই সংশোধনী আনা হয়নি। তবে ধারা ৩০-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘‘(১) অভিবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ ও উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনে তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ, কর রেয়াত, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি, দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও সনদায়ন, পুনঃএকত্রীকরণ কার্যক্রম প্রবর্তন করবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। (২) সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়ার সকল স্তরে এবং বৈদেশিক কর্মস্থলে নারী অভিবাসী কর্মীদের সম্মান, মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবার জন্য বিশেষ আর্থিক ও অন্যান্য কল্যাণমূলক কর্মসূচিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারিবে”। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত অভিবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা এখনো মোট অভিবাসীর সংখ্যার ৬ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ তারা এখনো পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ মোতাবেক তাদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো বাধা নেই। আবার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ৯(খ) ধারামতে, আলাদা প্রকল্প পরিচালনা করে দেশে ফেরত আসা নারী অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যবস্থার বিষয় রয়েছে। বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, সৌদি আরবে বাসাবাড়িতে যারা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তারা অনেক সময় সমস্যায় পড়েন। তাদের সঙ্গে যে চুক্তি, সেই চুক্তি অনুযায়ী দেখভাল করতে না পারাটা আমাদের ত্রুটি। এটি আমরা স্বীকার করি। একজন অভিবাসী নারী শ্রমিকের খোঁজ রাখা সম্ভব। কিন্তু ওখানে হাজার বাসায় আমাদের নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসেরও অনেক সময় তাদের ফোন মারফত খোঁজ নিতে কষ্ট হয়। অনেকের ফোন থাকে না। তাই সরকার চেষ্টা করলেও পারছে না, তাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। অভিযোগ পেলে তা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। সমস্যা আছে, আগামীতে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা যাতে আর কোনো সমস্যায় না পড়েন, এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। নারী শ্রমিকদের বাসাবাড়িতে না রেখে হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করলে (রাহা সিস্টেম) তাদের ওপর নির্যাতন অনেকটাই কমে আসবে, যা আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দেখতে পেয়েছি। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক দেশে ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের লাশের তথ্য আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ৭১৪ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। এর মধ্যে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৩১৯ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। অন্যদিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২০২০ থেকে ২০২২ সালের তথ্য বলছে, এ তিন বছরে ৪০৪ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ২২৭ জনের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ লেখা ছিল। সরকারি ও বেসরকারি তথ্য পর্যালোচনা করলে জানা যায়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যে পরের তিন বছরে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। নির্যাতনের তদন্ত জরুরি ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান কালবেলাকে বলেন, সৌদি আরবে মেয়েরা যেই বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সেই নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এজন্য নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনা আমাদের দূতাবাস সৌদি পুলিশসহ কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে। প্রয়োজনে তারা তদন্ত করুক। দুই দেশের যৌথ কমিটির বৈঠকে বিষয়গুলো আলোচনা করা উচিত। আর নিপীড়নের শিকার নারী গৃহকর্মী কোথায় যাবে, যৌন নির্যাতনের শিকার হলে কোথায় যাবে, দেশে ফিরে কী করবে—প্রতিটি বিষয় নির্দিষ্ট করে একটা এসওপি থাকা উচিত যাতে সবাই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জানে এবং বাস্তবায়ন করে। সেন্টার ফর স্টাডিজ সেন্টারের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইশরাত শামীম জানান, অভিবাসী নারী শ্রমিকরা দুই-তিন বছরের জন্য যেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন, কেন তারা সেখানে নির্যাতনের শিকার হবেন! কেন তারা দেশে লাশ হয়ে ফিরে আসবেন! সরকার বিষয়টি কেন তদন্ত করছে না। অন্যদিকে যারা লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন সেখানকার চিকিৎসক স্বাভাবিক মৃত্যু বলে যে রিপোর্ট দেয়, সেটি সঠিক কি না, বাংলাদেশের দূতাবাস ঘটনাস্থলে গিয়ে তা যাচাই করে কি না; এটিও দেখার বিষয়। নির্যাতনের শিকার অভিবাসী শ্রমিকদের দরকার চিকিৎসা অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, যেখানে একজন অভিবাসী নারী শ্রমিককে কাজে দেওয়া হয় সেই গৃহকর্তার ফোন নাম্বার, বাড়ির ঠিকানা বায়রার কাছে থাকা দরকার। কারণ রিক্রুট এজেন্সি যাকে কাজে দিয়েছে তার খোঁজ রাখা রিক্রুট এজেন্সির দায়িত্ব। নির্যাতনের শিকার অভিবাসী নারী শ্রমিকরা অতিরিক্ত ট্রমাটাইজ হয়ে দেশে ফেরেন। তাদের জন্য সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর দরকার। তাদের চিকিৎসার জন্য এয়ারপোর্টে চিকিৎসকের দরকার। যাতে দ্রুত তারা চিকিৎসার আওতায় আসতে পারেন। এয়ারপোর্টের পাশে যে সেফ হোম নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে জরুরি বিভাগ থাকা দরকার। সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক (কল্যাণ) শরিফুল ইসলামের মতে, প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫টি লাশ দেশে আসে। প্রত্যেককে এয়ারপোর্টে লাশ পরিবহনের জন্য ৩৫ হাজার এবং তাদের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। গত বছর ১৮১ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রাথমিক সেবা এবং বিদেশে যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাকে আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হয়। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহযোগী পরিচালক জান্নাতুল ফিরদাউস রূপা জানান, একজন অভিবাসী নারী শ্রমিক যখন নির্যাতনের শিকার এবং শূন্যহাতে দেশে ফেরেন। তিনি প্যানিক হয়ে আসেন। তারা সোশ্যাল স্টিগমায় পড়ে যান। তাদের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলিং, পুনর্বাসন এবং লিগ্যাল সহযোগিতার দরকার রয়েছে। মানসিক সমস্যা থেকে বের করে আনতে তাদের আমরা ডক্টরস সেলে পাঠাই। মেডিটেশনের ব্যবস্থাও করেছি। মেসেঞ্জার ও ফোনের মাধ্যমে সোশ্যাল কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। বীমা পলিসিও রয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরলে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, অভিবাসী নারী শ্রমিক যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন তাদের বা লাশ হয়ে টাকা-পয়সা ছাড়া দেশে ফেরেন, তাদের পরিবারের সদস্যকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা দরকার। এজন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনোরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ২০১৬-এর বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর, অন্যান্য সংস্থা, স্টেক হোল্ডারের কী কী দায়িত্ব রয়েছে। বেশিরভাগ নারীকর্মী মধ্যপ্রাচ্যে যান, সেখানে তারা যেভাবে নির্যাতনের শিকার হন, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসাটা তাদের প্রাপ্য বলে মনে করি। মহিলা অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) উপপরিচালক আয়েশা নার্গিস বলেন, মহিলা অধিদপ্তরের মাধ্যমে উন্নতর প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠালে কোনো নারী লাশ হয়ে দেশে ফিরবেন না। এর ফলে অন্য নারীরাও বিদেশে কাজ করতে যেতে আগ্রহী হবেন।