মেনোপজ রোগ নয়, নারীর জীবনের একটি পরিবর্তন

This story first appeared in Kalbela

ঋতিকার (ছদ্মনাম) বয়স ৫৬ বছর। মেধাবী শিক্ষার্থী, কর্মক্ষেত্রে পারদর্শী কর্মকর্তা, লেখক, বন্ধুমহলে সকলের মধ্যমণি তিনি। নিজের শরীরের প্রতিও যত্নশীল। এর পরও বছর দুয়েক ধরে তার মধ্যে একটা পরিবর্তন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। অনেক সময় পরিচিতজনের চেহারাও ভুলে যান। নাম বললে আবার মনে পড়ে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, বেঁচে থাকলে নারীর একটা বয়সে মেনোপজ হবে। এটা নারীর জীবনের একটি পরিবর্তন। মেনোপজের কারণে শারীরিক-মানসিক দুটি দিক রয়েছে। যে নারী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন, তাদের মানসিক সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এ কারণে কোনো কথা তার মনঃপূত না হলে একটুতেই রেগে যান।

কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং গাইনি ও অবসের অধ্যাপক ডা. আবদুল হালিমের মতে, কৈশোরে যেমন কিশোরীর শরীরে পরিবর্তন দেখা দেয়, যত্নের সঙ্গে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। মেনোপজ সময়ে নারীকেও যত্নের সঙ্গে সব পরিবর্তন মানিয়ে নিয়ে সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকে। কোষে অক্সিজেন সঞ্চালন হয় ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, শহরের নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা কাজের মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়াম বেশি করেন। তারা সারা দিনই হাঁটা-চলা, কায়িক পরিশ্রম করেন। রোদের তাপ শরীরে লাগায় ভিটামিন ‘ডি’র অভাব পূরণ হয়। শহরের নারীরা যারা বসে কাজ করেন তারা কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে তাদের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকবে।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় মেনোপজ নারীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এস টি সেন্টার রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে না জানার কারণে এখনো কোনো কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে উঠোন বৈঠক, মাঠ পর্যায়ের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসন্তী বিশ্বাসের মাত্র ৪২-৪৩ বছর বয়সেই মেনোপজ হয়। মেনোপজের কারণে তার হঠাৎ গরম লাগত, মাথা ঘোরাত। প্রচুর ঘাম হতো। ঘুম না হওয়ায় শরীর ক্লান্ত লাগত। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না।

এ প্রসঙ্গে বাসন্তী বিশ্বাস বলেন, ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে গাইনোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি ও গাইনোলজিক্যাল ইয়োগা করি। শারীরিক-মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আমার তিন থেকে চার মাস সময় লেগেছে। বয়সজনিত পরিবর্তন কম হওয়ায় নিয়মিত থেরাপি নিয়েছি। নিয়মিত ব্যায়াম করছি। এখন আমি ওই সমস্যাগুলো অনুভব করছি না।

Link to original story